দশকের পর দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে মায়ানমারের বিদ্রোহী বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রধান অং সান সু চি। অবশেষে এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে।
বুধবার ( ৩১ আগস্ট) মায়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেইপিতোতে শুরু হতে যাওয়া সম্মেলনে অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।
মায়ানমারে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে সুচির দল। এর পর থেকেই এই শান্তি আলোচনার জল্পনা কল্পনা শুরু হয়।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে শান্তি প্রক্রিয়াকে অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন সু চি।
ধারণা করা হচ্ছে, বুধবার শুরু হওয়া শান্তি আলোচনায় বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কয়েক দিনব্যাপী সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
নির্বাচনে জয়লাভের কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ বিদ্রোহী গ্রুপকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোকে সু চির সফলতা বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
স্বাধীনতা, আঞ্চলিক স্বশাসনের জন্য মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে ছোটো বড় অনেকগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
চীন সীমান্তে তৎপর শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপগুলো এর আগে সামরিক সরকারের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও আসন্ন বৈঠকে তারা অংশ নেবে বলে জানা গেছে। তবে এর পেছনে রয়েছে চীনের চাপ। দীর্ঘ আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার সমাপ্তি ঘটিয়ে কয়েক বছর আগে নিজেদের অর্থনীতি বিদেশিদের জন্য খুলে দেয় মায়ানমার সরকার।
এরপর থেকেই দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত চীন।
এর অংশ হিসেবে চলতি মাসে সু চির চীন সফরের সময় মায়ানমারে শান্তি প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করার অঙ্গীকার করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে তারও আগে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভের সময় থেকেই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী।
এদিকে অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় সম্মতি জানালেও বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির সঙ্গে যে কোনো আলোচনার শক্ত বিরোধিতা করছে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী।
আলোচনায় বসার পূর্বশর্ত হিসেবে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর নিরস্ত্রীকরণের দাবি করে সামরিক বাহিনী। তবে তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো।
অবশ্য সম্মেলনের আয়োজক কমিটির একজন সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, যদি এই বিদ্রোহী গ্রুপগুলো সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরে আসার অঙ্গীকার করে তবে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার।
এই শর্ত মেনে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কোনো প্রতিনিধি বুধবার শুরু হওয়া সম্মেলনে অংশ নেবে কি না তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
পাঠকের মতামত: